১১টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ১৪টি ঝুঁকি চিহ্নিত করে ১১০টি কর্মকাণ্ড প্রস্তাব করেছে ন্যাপ

April 2, 2022

জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (NAP - National Adaptation Plan) চূড়ান্তকরণের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আজ ২ এপ্রিল ২০২২ এক কর্মশালার আয়োজন করে। জলবায়ু-ঝুঁকিতে থাকা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, ব্যক্তি, নারী, যুব সমাজ, সরকারি কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে খসড়া ন্যাপ প্রণয়ন করা হয়েছে যা বর্তমানে বিশেষজ্ঞদের মতামত সন্নিবেশের মাধ্যমে চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। ইউএনডিপি (UNDP)-এর সহায়তায় এবং সবুজ জলবায়ু তহবিলের (Green Climate Fund) অর্থায়নে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) প্রণয়ন করছে।

ন্যাপ প্রণয়নের লক্ষ্যে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিভক্ত করে জাতীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৩০ এর অধিক পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়। একই সাথে এসব অঞ্চলে ব্যক্তি পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ মতামত ও জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে গোষ্ঠী-গত আলোচনা করা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁদের মতামত ও স্থানীয় পর্যায়ে নেওয়া অভিযোজন কৌশল সমূহ খসড়া ন্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ শাহাব উদ্দিন, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব সাবের হোসেন চৌধুরী, এমপি, মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী জনাব হাবিবুন নাহার, এমপি এবং ইউএনডিপির ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ভ্যান নুগুয়েন। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় C3ER এর ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং ন্যাপ প্রণয়ন কনসোর্টিয়ামের দলনেতা ডক্টর আইনুন নিশাত অভিযোজন কৌশল এবং এবং সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক জনাব মালিক ফিদা এ খান খসড়া ন্যাপের এর উপর দুটি উপস্থাপনা করেন।

অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে জনাব মোঃ মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন উইং) এবং জাতীয় প্রকল্প পরিচালক, ন্যাপ বলেন, "ন্যাপ (জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি প্রণয়ন করতে গিয়ে আমরা দেশের সর্বাপেক্ষা জলবায়ু বিপদাপন্ন এলাকায় পরামর্শ সভা ও দল ভিত্তিক আলোচনা করেছি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটিকে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন পরিকল্পনায় রূপ দেওয়া হয়েছে।" তিনি বিভিন্ন আলোচনা থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ভূ-গর্ভস্থ পানির যথাযথ ব্যাবহার, লবণাক্ততা প্রতিরোধ, অববাহিকা-ভিত্তিক নদী-শাসন ইত্যাদি।

ভ্যান নুগুয়েন, ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউএনডিপি বলেন, “আমি আশাবাদী যে ন্যাপ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় টেকসই অভিযোজন কর্মকাণ্ড কৌশল নির্ধারণ করার পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় এর সম্পৃক্ত-করণে ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে আমার বিশ্বাস এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের উৎস থেকে অর্থায়ন নিশ্চিত করবে।”

জনাব সাবের হোসেন চৌধুরী, এমপি বলেন, “বাংলাদেশকে জলবায়ু সহনশীল দেশে পরিণত করতে রিস্ক ইনডেক্স ও রিসিলিয়েন্স প্ল্যান তৈরি করতে হবে। তবে আমরা এখনও এ ধরণের কোনও ইনডেক্স তৈরি করতে পারিনি। একই সঙ্গে ন্যাপে রিস্ক প্রোফাইলের বিষয়টিকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।” এছাড়া অভিযোজন বিনিয়োগ থেকে দেশ কি সুবিধা পাবে তাও সকলের কাছে পরিষ্কার হতে হবে।

জনাব হাবিবুন নাহার, এমপি  বলেন, “আমাদের অভিযোজন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই স্থানীয় সরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। তিনি প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণের জন্য উদ্ভাবনী কৌশলের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।  ”

জনাব মোঃ শাহাব উদ্দিন, এমপি বলেন, “চূড়ান্ত ন্যাপ প্রণয়নে আমরা বিভিন্ন অংশীজনের মতামতে গুরুত্বপূর্ণ। এর বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। সফল ভাবে ন্যাপ প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়নে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল সরকারী এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করবে।“

জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, “একটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আমরা এই খসড়া ন্যাপ প্রণয়ন করেছি। এটির চূড়ান্তকরণে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সাথে নিবিড় ভাবে কাজ করব ও তাদের সকলের মতামত এতে সন্নিবেশিত করব।”

উল্লেখ্য যে, খসড়া জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ১৪ টি জলবায়ু ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে , চরম উষ্ণতা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, নদ-নদী সৃষ্ট বন্যা, নদী ভাঙন, খরা, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধ্বস, তীব্র শীত, বজ্রপাত, শহরাঞ্চলের বন্যা এবং সমুদ্রের অম্লায়ন।

ন্যাপ প্রণয়নে স্থানীয় অভিযোজন প্রক্রিয়া ও কৌশল উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ একটি জলবায়ু সহনশীল দেশে পরিণত করতে এতে ১১০টি কর্মকাণ্ড প্রস্তাব করা হয়েছে। ন্যাপ প্রণয়ন ও এর সফল বাস্তবায়ন সরকারী কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকিতে থাকা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে দৃঢ় সহযোগিতা উপর নির্ভরশীল। চূড়ান্ত ন্যাপ স্থানীয় ও খাত ভিত্তিক অভিযোজন চাহিদা নিরূপণ ও এর অর্থায়ন কৌশল নির্দেশ করার পাশাপাশি তা সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আন্ত-প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয় ও খাত ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করবে।